বর্তমান যুগের নতুন প্রযুক্তি যেমন: ইন্টারনেট, ক্লাউড স্টোরেজ, ডেটাবেস সফ্টওয়্যার, ইত্যাদি ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য করা একদম অচলই বলা চলে। সেই সাথে রয়েছে নানান হার্ডওয়ার ও সফ্টওয়্যার ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার বিপদ।
এমন সব আক্রমনের শিকার হওয়া আজকাল অনিবার্য এবং এর থেকে রেহাই পাওয়াটাও অনেক কষ্টসাধ্য।
তাই আজ কিভাবে ভাইরাসের আক্রমন থেকে আপনার ব্যবসাকে সুরক্ষিত রাখা যায়, সেই বিষয়ে সাত-টিপস জানবো, চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক।
১. পাইরেটেড সফ্টওয়্যার নয়
এটি আমরা অনেকেই করে থাকি। কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য নকল/ আনঅফিসিয়াল সফটওয়ার ব্যবহার করে থাকি। এতে হ্যাকারদের বিশেষ কোডিং এর মাধ্যমে হ্যাক কিনবা ডাটা ব্রিচ করতে সুবিধা হয়। কেননা এই সমস্ত সটওয়্যারগুলোর কোনো সিকিউরিটি ফিচার থাকে না।
যারা উইন্ডোজ 10 কিংবা তার নিচের জেনারেশন গুলো ব্যবহার করে থাকেন, তারা অবশ্যই প্রমাণিত ও বিশ্বস্ত সোর্স থেকে সফটওয়ার ডাউনলোড করবেন।
২. ভাইরাস-বিহীন এক্সটার্নাল ডিভাইস
আরেকটি সাধারণ ভুল আমরা সবাই করি- তা হলো যে কোনো জায়গা থেকে এক্সটার্নাল ডিভাইস এনে সরাসরি তা কম্পিউটারে ঢুকিয়ে ফেলি। এটি একটি মারাত্মক ভুল। এইভাবেই সব ফাইল কোরাপটেড হয়ে পরে এবং ডাটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়।
তাছাড়া ম্যালওয়্যার ও ইনস্টল হয়ে, কম্পিউটারে থাকা সব জরুরী ডাটা মুছে যায়। সেই সব ডাটা রিট্রিভ করাও অনেক কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। তাই যে কোনো এক্সটার্নাল ডিভাইস সংযুক্ত করার আগে, তা ভাইরাস মুক্ত আছে কিনা, সেটি যাচাই করে নেয়া জরুরী।
৩. উইন্ডোজ/ম্যাক ফায়ারওয়াল অফ থাকা
আমাদের মধ্যে অনেকেই নিজের অজান্তেই উইন্ডোজে থাকা বিল্ট-ইন ফায়ারওয়াল অফ করে দিই। এই প্রি-ইনস্টলড প্রটেকশন রিমুভ হয়ে গেলে, বাইরে থাকা সমস্ত ম্যালওয়্যার ও কম্পিউটার ভাইরাস আপনার ডিভাইসটিকে নষ্ট করে দিতে সক্ষম।
প্রয়োজনে খাতিরে নানা ওয়েবসাইট ভিজিট করতে হয়। সব ওয়েবসাইট সমান ভাবে সিকিউরড থাকে না। সুতরাং যদি কোনো কারণে ফায়ারওয়াল অফ হয়ে যায়, তা আবার চালু করে দিতে হবে।
৪. সন্দেহজনক লিংক
ফায়ারওয়াল ও অন করা আছে, কোনো অবিশ্বস্ত এক্সটার্নাল ডিভাইস ও প্রবেশ করানো হয়নি, তাও কিভাবে কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকে ব্যবসা পরিচালনা করার সমস্ত ডাটা নষ্ট কিনবা চুরি হয়ে যায়?
এই সমস্যার সবচেয়ে বড় কারন হলো সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করা ফেলা। সন্দেহজনক লিংক থেকে কোনো কিছু ডাউনলোড করবেন না। শুধুমাত্র পরিচিত ওয়েবসাইট থেকেই ফাইল ডাউনলোড করবেন, আর পি টু পি ( পিয়ার টু পিয়ার) ফাইল শে়ারিং ওয়েবসাইট যেমন: Torrent থেকে জিপ ফাইল ডাউনলোড থেকে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করুণ।
৫. পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করা
আপনার ডিভাইসটি পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত করা কম্পিউটারের প্রথম রক্ষাবার্তা। আপনার প্রতিটি একাউন্ট ও ডিভাইসের জন্য আলাদা/ ইউনিক পাসওয়ার্ড সেট করুন। এই পাসওয়ার্ড গুলি কারো সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
বেশি জটিল পাসওয়ার্ড আবার মনে রাখা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। সেই ক্ষেত্রে একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন।
যদি ডাটা সিকিউরিটি নিয়ে তারপর ও কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়, 2 Factor Authentication অন করে রাখা ভালো। অর্থাৎ আপনার অনুমতি ছাড়া ডাটা এক্সেস করা যাবে না।
৬.. অপারেটিং সিস্টেম আপটু-ডেট রাখা
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম অথবা ম্যাক ওএস, আপনি যে ইন্টারফেসের ইউজার হয়ে থাকেন না কেনো, অপারেটিং সিস্টেমে আপটু-ডেট রাখা প্রয়োজনীয়। দিন যত যাচ্ছে, কম্পিউটার ভাইরাস ও হ্যাকিং অ্যাটাক তত শক্তিশালী হয়ে পড়ছে।
এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে, অপারেটিং সিস্টেম ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানী প্রতিনিয়ত সিস্টেম আপডেট করার জন্য আমাদের নোটিফিকেশন দিয়ে থাকে। এই আপডেটটি করা অতীব প্রয়োজনীয় কারন কোন লুকানো বাগ/ম্যালওয়্যার থাকলে সেটি প্যাচ-আপ করা হয়ে যায়।
তাছাড়া আরো কিছু সফওয়্যার অপারেটিং ইস্যু থাকে যা, অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ডিটেক্ট করতে পারে না। সেই ক্ষেত্রে একটু সময় নিয়ে নন পাইরেটেড ভার্শন দিয়ে সিস্টেম আপডেট করা ভালো।
৭. ডাটা ব্যাকআপ রাখুন
ধরুন কোনো ভাবে আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেলো এবং একে একে সব অ্যাপ ক্র্যাশ করছে। এমন অবস্থায় আপনার পূর্বপরিকল্পনা করা প্রয়োজন।
ডাটা ব্যাকআপ করে রাখা, সকল ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একটু সময় নিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় ফাইলগুলি ক্লাউড স্টোরেজ বা হার্ডড্রাইভে ব্যাকআপ করে রাখুন।
বলে রাখা ভালো- আপনার ব্যাকআপ ফাইলগুলি যেন proper authentication channel দিয়ে নিরাপদ জায়গায় সংরক্ষণ করা থাকে।
সাথে আরো কিছু:
১. প্রতারণামূলক ওয়েবসাইট আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য জানতে চায়। এই তথ্য অনুযায়ী তারা আপনার অনুমতি ছাড়াই আপনার হয়ে অনেক অপরাধ-মূলক কাজ করে থাকে। যেমন: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি। তাই অপরিচিত ওয়েবসাইট গুলিতে লগইন করা থেকে সাবধান থাকুন।
২. ভিপিএন (Virtual Private Network) একটি বিশেষ নেটওয়ার্ক প্রোটেকশন টুল, যা আপনার লোকেশন কে হাইড করে অন্য দেশের সার্ভারের দিয়ে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সুযোগ দেয়। পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ভিপিএন ব্যবহার করুন।
৩. এক্সটার্নাল অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়। সেই ক্ষেত্রে নন-পাইরেটেড, পেইড ও অথেনটিক সফটওয়্যার ইউজ করা বাধ্যতামূলক।
উপসংহার
ভাইরাসের আক্রমন থেকে আপনার ব্যবসাকে সুরক্ষিত রাখতে সাত-টি টিপস আজ আলোচনা করা হলো। আশা করি আপনার সব প্রয়োজনীয় ডিভাইস গুলো সুরক্ষিত থাকবে।
মনে রাখবেন- আপনার ডাটা হ্যাকারসদের কাছে অনেক মূল্যবান, তাই আপনার দিক থেকে সর্বোচ্চ সবাধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে ফার্স্ট লাইন অফ ডিফেন্স।